১
শহরতলির মাছেরা ।
রুই, কাতলা,মৃগেল । মৌরলা, ট্যাংরা কিংবা চারা ।
শহরতলি থেকে তাদের কলকাতা আনা হলে তারা তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাঁচতে বাঁচতে শেষমেষ মরেই যায় । সেই অলিখিত,অনির্দিষ্ট কিন্তু সম্ভাব্য মৃত্যুর পর শহরের প্রান্তিক পুকুরে তাদের স্নান করিয়ে পালিশ করা হয় । রোদের ঝিকিমিকি আলো পুকুরের জলে আর পিঠের আঁশে মিলমিশ গেলে সেই সব মৃত মাছেরা কেটে ফেলার জন্য প্রস্তুত থাকে । যে কয়জনের সীমিত ভাগ্য তারা ছোট গামলার ভিতর করে যেতে যেতে আড়চোখে দেখে শহরের আকাশ, ইলেকট্রিক-টেলিফোনের তার, তারে বসা কাকদের দল কিংবা গাছ থেকে লটকে থাকা ছেঁড়া ঘুড়ি । এরপর বহুতল বাড়ির নিচে ‘ফ্রেশশশশ পুকুরের মাছছছছ’ বলে হাঁক পাড়া মেছুনেদের হাতে উঠে আসে তারা । ‘দ্যাখেন বাবু, কানকো এখনো নড়ছে। এ কি আর কইমাছের মতো নাফাবে বাবু?’ কখনসখনো কোমল কচি কিছু মুখ ও ঝুঁকে পড়ে – কলকাতা শহরের মধ্যবিত্ত বাঙালি বাচ্চারা যারা পাতে কাটা পিস ছাড়া মাছ কেমন দেখতে হয় জানে না, সেই সব স্বপ্নের মুখগুলো।
মরে যাওয়ার আগে ও পরে মাছেদের চোখের পলক পড়ে না ।
২
ইস্কুলে পড়ার সময় আমি হ্যারল্ড ক্রেন্ত্স-এর ‘ডার্কনেস এট নুন’ পড়েছিলাম। ক্রেন্ত্স শুরুই করেছিলেন – ‘Blind from birth, I have never had the opportunity to see myself and have been completely dependent on the image I create in the eye of the observer. To date it has not been narcissistic.’ যখন ছোট আমাদের পাড়ার বাজারের এক মাছ-বিক্রেতার একটা নকল চোখ ছিল – চোখের যে সকেটটা থাকে মাঝে মাঝেই সেটা থেকে চোখটা ঠেলে বেরিয়ে আসতো যেন। বিশেষ করে মাথা জোরে ঝাঁকালেই । অনেকরাতেই আমার ঘুম আসতো না ওই মাছের বাজারের লোকটার মুখ মনে করে । আমার গলায়-গলায় বন্ধু রাজু বলেছিল চোখের জায়গায় নাকি একটা পায়রার ডিম লাগানো আছে – সেটাই নড়াচড়া করে বলে চোখটা বেরিয়ে পড়তে চায় । আমি সেটা ভাবিনি কখনো – আমি ভাবতাম চোখটা আবার সেট করা হয় যখন তখন শব্দটা ঠিক কেমন হয় ? আমার মনে হত চকাস করে অনেকটা চুমু খাওয়ার মত হয়ত কিংবা ফট করে বাঁশ ফাটার – সেটা তখন জানা হয়নি ।
৩
আসতে আসতে চারপাশের দৃশ্য গুলো হারিয়ে যেতে শুরু করে, আলোর বিন্দুগুলো ক্রমশ ঝাপসা হয়ে রামধনু – আমার ভালো লাগত , খুব মজা । তখন আমি হুড়মুড়িয়ে সাইকেল চালাতাম – আমাদের পিচগলা কালো রাস্তার ওপর দিয়ে । লম্বা, খুব লম্বা ছিল সে রাস্তা । আমি আর রাজু সাইকেল চালিয়ে বাঁধের কাছাকাছি তারপর কাশফুলের মধ্যে পিঠ পেতে শুয়ে পড়তাম – পুরো আকাশ দেখা যেত ওপরে গাঢ় নীল, কখনো কমলা। আর নিচে রান্ড-বাড়ির মেয়েগুলো স্নান করতে আসত । সে এক অপূর্ব সিম্ফনি – প্রকৃতির, শব্দের ।
অমনি একদিন সাইকেল চালানোর সময় আকাশে রামধনু যেন, রাজু বলল – ‘ধুউর , তুই শালা কবি’ । কবি ও কবিতা দুটোকেই আমি সন্দেহের চোখে দেখা তখন শুরু করিনি তাই শুনে মনে হল প্যাডেলটা যেন হালকা – আমি উড়ে চলেছি । ‘কি রে লাইন চেঞ্জ করছিস যে, শালা দেখতে পাচ্ছিস না নাকি গান্ডু’ – আমি রাজুর এসব কথায় পাত্তা দিইনি প্রথমে । সেদিন রাতে, অনেক রাতে আমার চোখে ব্যথা করে খুব । ঘুমের মধ্যে জেগে উঠি আমি । বাবা কে বলি – ‘ডান চোখটা ব্যথা করছে বাবা’ । বাবা সারাদিন চটকলে কাজ করে তাই মেজাজ তিরিক্ষি হয়েই থাকে সব সময়, ক্লান্তও থাকে বেচারা । আমার কথা শুনে প্রথমেই আমার কান ধরে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারল গালে । আমি ছিটকে মাটিতে পরে গেলাম । পড়ার সময় পিতলের ঘড়াটায় আমার মাথাটা ঠুকে গেল খুব জোর – ডান চোখের পাশটা কনকন করে একটা বাল্বের আলো যেন জ্বলে উঠলো । তারপর সব অন্ধকার । আমার মা ডুকরে কেঁদে উঠে ছুটে এসে তারপর নিঃশব্দে আমার মুখে মাথায় হাত বোলাতে লাগলো। বাবা আমায় আবার মারতে পারে সেই ভয়ে কিংবা হয়ত নিজের গায়েই কয়েক ঘা পড়তে পারে সেই আশঙ্কায় । প্রতি সন্ধেতেই আমার আর মা-র মধ্যে একটা চাপা কম্পিটিশন চলত বাবার কাছে মার না খাওয়ার ।
পরদিন পাশের বাড়ির মন্টুকাকা আমায় নিয়ে গেল জেলা হাসপাতালে – সেখানে যে মহিলা ডাক্তার আমার চোখ দেখলেন তার ঠোঁটে আমি প্রথম প্রজাপতি দেখতে পেলাম ।
৪
ওনার নাম শুনলাম নাজনীন। পেলব । ভঙ্গুর ।
ওই রকম ঠোঁট আমি তার আগে আর কারো দেখিনি । আর সেকারনেই যেন আমার অর্ধেক কষ্ট কমে গেল । আমার চোখের ওপর আলো ফেলে যখন দেখছেন মন দিয়ে তখন ঠোঁটদুটো ঠিক আমার নাকের ওপরে । উত্তেজনায় আমি খুউব ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকলে উনি বলেন – ‘আহ চুপচাপ বসে থাক, এত নড়াচড়া করলে আমি দেখব কি করে?’ দুদিন ধরে অনেক ড্রপ দেওয়া হল, চোখের লাল ভাব তাতেও কমল না, তত দিনে আমি আর দেখতেও পাচ্ছি না ডান চোখে । রাজু দেখা করতে এসেছিল বাড়িতে – ‘শুনলাম তোকে নাকি কোন জিনপরী দেখছে’ বলে খিক খিক করে হাসতে লাগল । আমি ওসব কথায় পাত্তা না দেওয়ায় রাজু যেন আরো খেপে গেল – ‘আমার চোখে কিছু একটা করতে হবে শালা না হলে তুই তুলে নিবি’। আমি মনে মনে হাসি ।
দুদিন পর নাজনীন মন্টুকাকা কে বললেন – ‘ওকে কলকাতা নিয়ে যান । এখানে ওর চিকিৎসা হবে না, ওর প্রবলেম হলো শ্রিনকিং আই । এখনো কলকাতা গেলে হয়ত চোখটা বেঁচে গেলেও যেতে পারে । দেরী করলে কিন্তু পরে পস্তাতে হবে ।’ আমি প্রথমে খুব ঘাবড়ে গেলাম । এত কিছু দেখার আছে সেগুলো সব এক চোখ দিয়ে দেখতে হবে? এটা ভেবেই আমার কান্না পেয়ে গেল । আমায় কাঁদতে দেখে নাজনীন আমার পিঠে হাত রাখেন – ‘দ্যাখো ,কোনো চিন্তা কোর না। চোখ ভালো হযে যাবে আশা করি।’ আমার কান্না তাতেও থামে না – ‘একটা চোখে আমি আর দেখতেই পাব না! আর চোখের জায়গাটাও কেমন ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যাবে’ । নাজনীন আরো নরম হয়ে আসেন -‘এতেই অত ভেঙ্গে পড়লে কি করে হবে? সত্যিকারের দুঃখের সামনে পড়লে তখন কি করবে? এই যে আমার বাঁ চোখটা দেখছ সেটাও কিন্তু আসলে নেই। বুঝতে পেরেছিলে?’ আমি অবাক হয়ে যাই । ‘ সেই ছোটবেলা থেকেই কাজল পরছি । মেকআপ করছি যখন তখন তো এক চোখ বন্ধ রেখে হয়ত কাজল পরছি, তারপর সেই চোখ হয়ে গেলে অন্য চোখ । যে চোখটা ভালো আমার সেই চোখ বন্ধ করে মেক-আপ করছি যখন তখন আই-শ্যাডোটা ঠিকমত হলো কি না সে বোঝার তো উপায় নেই। হয়ত ধেবড়ে গেল । তখন আবার করতে হবে পুরোটা । এখন প্র্যাকটিস হয়ে গেছে’ বলে আবার সেই প্রজাপতি হাসিটা দিলেন নাজনীন – ‘কিংবা অনেক আগে কলকাতায় একটা ৩ডি সিনেমা দেখল সবাই – আর আমি এক চোখ নিয়ে কিছুই বুঝতে পারলাম না । আমার ভাই-বোন কত আনন্দ করল ।’ আমার নাজনীনের জন্য খুব মন কেমন করতে লাগল । ইসস এমন সুন্দর দেখতে অথচ চোখটাই নেই? নিজের কষ্টটা মনে হল গৌণ । নাজনীন আমার মনের কথা ধরে ফেললেন । ‘তোমার আগে যে মেয়েটাকে দেখলাম তার বয়স কত জানো? মাত্র ১০। আর এই বয়সেই ও জেলা বাস্কেটবল টিমে খেলে । এ বছর থেকে ফুটবল খেলতে চাইছে । ওর বাবা এসেছেন আমাকে জিজ্ঞেস করতে । আমি বলেছি সব খেলবে ও । একদম নরমাল । ওর-ও আমার মত বাঁ চোখটা অন্ধ । বাঁ দিক দিয়ে কোনো প্লেয়ার ট্যাকেল করলে ও দেখতে পাবে না প্রথম প্রথম হয়ত । তারপর এডজাস্ট হয়ে যাবে এক চোখেই । তুমি ফুটবল খেল?’
৫
এর পর মন্টুকাকা আমায় কলকাতা নিয়ে আসে । নাজনীন কে আমি বলি ‘আপনাকে আমি সব জানাবো কি বলল কলকাতার ডাক্তার’ । ‘চিঠি লিখো’ বলে ঠিকানা দিয়ে দিলেন নাজনীন, তার সেই প্রজাপতি ঠোঁট আমার আর দেখা হল না কোনদিন । কলকাতায় মন্টুকাকা আমায় ২-৩ জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। আমি তার আগে কলকাতা গিয়েছিলাম যখন সেটা ঘুরতে । কলকাতার হাসপাতাল এই প্রথম দেখলাম – ভয়ংকর ঠান্ডা । অনেক করেও আমার ডান চোখটা আর বাঁচানো গেল না । বাবার এক ছোটবেলার জিগরি দোস্ত তার ব্যবসা কলকাতায় তার বাড়িতে কিছুদিন ছিলাম – তার গুদাম ঘরে আমি আর মন্টুকাকা । মন্টু কাকা আমায় খুব আদর করেছিল তারপর আমার মাথাটা বুকে নিয়ে কেঁদেও নিল ক্ষানিকটা । আমি মন্টুকাকাকে কোনদিন বুঝতে পারিনি । আমার জন্য কেন এত করেছিল লোকটা কে জানে? শেষমেষ আমার চোখেও নকল চোখ বসল – কোরালের । কোরালে অনেক সূক্ষ্ম ফুটো থাকে অনেকটা ঝাঁঝরির মত তাই চোখের মাসলগুলো নাকি ভালোভাবে নকল চোখটাকে ধরে রাখতে পারবে । আমি অনেকদিন বাড়িতে শুয়ে রইলাম এর পর, বাবা আমায় সেই রাতের পর থেকে আর কিছু বলত না । ওই থাপ্পড়টা মেরে বোধহয় বাবার মনে কোনো অনুশোচনা হয়েছিল । আমি নাজনীনকে দশটা চিঠি দিয়েছিলাম । এর পর একদিন হঠাৎ একটা উত্তর পেলাম – উনি কলকাতা চলে যাচ্ছেন , কলকাতার ঠিকানা দিয়ে দিলেন – ‘তোমার চোখের ট্রিটমেন্ট ঠিকই হয়েছে । আমিও এরকমই ভেবেছিলাম । রেস্ট এ থেকো আর চিঠি লিখতে থেকো ।’
প্রথম প্রথম আমার এক চোখ দিয়ে গভীরতার আন্দাজ পেতে অসুবিধা হত খুব । গ্লাসে জল ঢালতে গেলে বাইরে পড়ে যেত আর মা ছুটে এসে জল খাইয়ে দিতে চাইত । ক্রমে ক্রমে আমি বুঝতে শুরু করলাম যে আমার কাজটা আমাকেই করতে হবে । আমি সাইকেল নিয়ে বেরোতে শুরু করলাম আবার । রাজু আমাকে একা ছাড়তে চাইত না । আমরা আবার ও বাঁধের কাছে যেতাম । কিন্তু আকাশ ছাড়া আর কিছু দেখতেই আমার আর ভালো লাগত না । রাজু ও বেশি কথা বলত না । ওর যে দুটো চোখই আছে সেই অপরাধেই যেন ও গুম হয়ে থাকত । ‘শালা, কিচ্ছু চিন্তা করিস না , লোকে মাউন্ট এভারেস্ট যাচ্ছে এক চোখ আর এক পা নিয়ে’ অনেক চেষ্টা করে কিছু কথা যোগাড় করে রাজু বলেছিল । আমি ওকে সেই লোকটার নাম জিজ্ঞেস করে লজ্জা দিইনি । জানি যে রাজু জানে না , এমন কেউ সত্যি আছে কি না । কিন্তু তার চেয়েও বড়ো কথা হল আমার নিজেকে নিয়ে কোনো দুঃখ বা করুণা হচ্ছিল না ।
৬
‘আমাদের যে দুটো চোখ তাদের মধ্যেকার দুরত্ব দুই ইঞ্চি মত । যখন আমার দুটো চোখই ছিল তখনই দেখেছিলাম যে দুটো চোখ আলাদা আলাদা করে ইমেজ দ্যাখে আর তারপর ব্রেন দুটোকে মিলিয়ে দেয় মাথার ভিতর কোথাও একটা । এটাও জানবে যে ২০ ফুটের দূরের জিনিসকে দেখার ক্ষেত্রে এই দুটো চোখের মধ্যেকার ২ ইঞ্চি দূরত্ব কোন তফাত করতে পারে না । তাই ২০ ফুটের বাইরে যার দুটো চোখ আছে সে যা দেখবে সেটা সেম হবে একজনের যার একটা চোখ আছে ।আমি একটা এক্সারসাইজ করতাম – সেটা হচ্ছে দুচোখের কাজটা এক চোখ দিয়ে নকল করার চেষ্টা । যাতে কাছের জিনিসের ক্ষেত্রেও আমার ব্রেনকে ট্রেইন করতে পারি যে ভাবে দুচোখওলা মানুষরা দেখে থাকে । কাছের কোনো জিনিস দেখার ক্ষেত্রে তুমিও তোমার মাথাটা সামান্য নাড়বে বাঁ দিক থেকে ডান দিক – অনেকটা যেন তোমার ডান চোখটা থাকলে যেখানে থাকত সেখানে তুমি বাঁ চোখটা নিয়ে আসছ । ব্রেন কিন্তু তখন আবার ওই ২ পজিশনের ইমেজই প্রসেস করবে । চেষ্টা করে দেখতে পার।’ এত বড় চিঠি এর আগে নাজনীন আমাকে আর লেখেননি । আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই। ওঁর কথামত সুরু ও করে দিই প্র্যাকটিস । শুয়ে পড়ে একটা ক্যাম্বিস বল কে ছুঁড়ে দিই ওপরে তার পর সেই বলটাকে ক্যাচ করতে থাকি । প্রথম প্রথম মিস হয়ে যায় এক দুবার , তারপর আর হয় না । আমি জানি আবার মাথার ভিতর খেলতে থাকবে তরঙ্গ । রেটিনা ও ব্রেন এর মধ্যে বসিয়ে দেওয়া হবে মাইক্রোচিপ যা সমস্ত ছবি গুলোকে কিছু ইলেক্ট্রিকাল ইম্পালসে পরিণত করে পাঠিয়ে দেবে একটা মিনি প্রজেক্টরে । সেইখান থেকে আলোক-কণা আলোক-সেল গুলোকে উদ্বুদ্ধ করে ব্রেন এ পাঠাতে থাকবে ‘কোড’ । আমার বাঁ চোখটা হয়ত পুরো নষ্ট হয়ে যাবে না, আমার ডান চোখটাও হয়ত বাঁচিয়ে ফেলা যেত ।
নাজনীন আমাকে এই এতবছর পর এখন ফোননম্বর দিয়েছেন, আমি ও এখন ‘তুমি’ বলি নাজনীনকে।
– ‘তোমাকে দেখতে এবার কলকাতা যাব’
– ‘না তুমি আসবে না, পাকামি করে’
– ‘কেন? আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে খুউব । যদি আর না দেখা হয়?’
– ‘না হলে হবে না। দেখা করার কি আছে ?’
– ‘আমার বাঁ চোখে টানেল ভিশন শুরু হয়েছে, ক্রমশ ঝাপসা হচ্ছে’
– ‘গ্লোকুমা অনেক লোকের থাকে চিন্তার কিছু নেই , ভালো ডাক্তার দেখাও, কলকাতায় বা সাউথে।’
– ‘তোমার ঠোঁট দেখে আমার প্রজাপতি মনে হয়েছিল’
– ‘সেকি, ডাক্তারদের অমন ভাবে দেখতে হয় না, সেসব শেখোনি দেখছি ছোটবেলায়’
– ‘তুমি আমাকে চিঠি লিখতে না আমার খুব কষ্ট হত। জানতাম তুমি ব্যস্ত, তবু । ‘
– ‘ব্যস্ত ছিলাম কিন্তু আমি চাইতাম তুমি আমায় অনেক অনেক চিঠি লেখ ।’
– ‘তুমি বিয়ে কর নি কেন নাজনীন?’
– ‘আমায় চিঠি লিখত না কেউ’
– ‘আমি যে এত লিখলাম’
– ‘একদিন সমস্ত চিঠি আমি পুড়িয়ে দেব – তোমাদের সমস্ত চিঠি । আর তার সামনে বসে থাকব আমি । যেভাবে রংমশাল গুলো পুড়ে গিয়েছিল, তোমরা সেদিন কেউ ছিলে না, কেউ দেখনি ।’
নাজনীনের গলাটা ভাঙ্গতে থাকে । আমি আস্তে আস্তে ফোনটা কেটে দিই । মরে যাওয়ার আগে ও পরে আমার কোন চোখের আর পলক পড়ে না ।