Fiction

ভাসান

‘বল, বল দুর্গা মাঈকি জয়’ । ‘আসছে বছর আবার হবে, বছর বছর আবার হবে’ । ধ্বনিতে আকাশ, বাতাস মুখরিত হয়ে উঠেছে। পল্লীর পুজো কমিটির সেক্রেটারি গোপালবাবু ঢাকিদের মধ্যে যে মাতব্বর তাকে ডেকে বলে দিয়েছেন খুব ভালো করে, জোরে জোরে যেন ঢাক বাজানো হয় এখন – ‘বাবাজি, এবছর আমি সেক্রেটারি, গত ১০ বছরের তুলনায় পুজো সবচেয়ে ভাল হয়েছে। শেষ পাতে ঢাক নিয়ে যেন কেউ কথা না শোনাতে পারে। সে তুই বরং কাল সকালে আমার বাসায় একবার আয় । কিছু পুরনো কাপড় আছে তোর মেয়ে বৌএর কাজে লেগে যাবে। বুঝেছিস তো, এটা উপরি’ । মাতব্বরটির নাম রসিক – সে রসিক লোকই বটে । সুযোগ বুঝে একটু ঝুঁকে পড়ে সে, হাত কচলে কাঁচুমাচু মুখ করে জিজ্ঞেস করে – ‘আজ্ঞে , আমার ফতুয়াটাও বাবু …’ বাবু ইঙ্গিতটি ধরে ফেলেন আর মনে মনে বিরক্ত ও হন কিন্তু সেটা মুখে দেখানোর সময় এটা নয়। এখন মাথা গরম করলে চলবে না। আগে ভালয় ভালয় ভাসানটা হয়ে যাক তো – ‘আরে সব হবে, তোর ও হবে, এখন যা দিকিনি’ । রসিক ফিরে আসে – আরো দুজন ঢাকি আছে তাকে নিয়ে আর সঙ্গতকার ও আছে । তিনজনে এবার শুরু করে দিয়েছে ঢাকে বোল তোলা – ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন’ ।

এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকে অতীন । প্রতিবার এই শেষের সময়টা চোখ ফেটে জল আসে তবু সে আসবে আর কাঁদবে। ‘অত কষ্ট হলে ভাসানে আসিস কেন’ তাকে মা বলেন। অতীন বোঝাতে পারে না কেন সে আসে। বিলের জলে দুগ্গা ঠাকুরের মুখটা যখন আস্তে আস্তে তলিয়ে যায়, শহিদ কলোনির ছেলেগুলো আগে থেকে জলে নেমে দুগ্গা ঠাকুরের গা থেকে মুকুট, গয়নাগুলো খুলে নিতে থাকে তখন ওর খুব রাগ ও হয়। বাবা বুঝিয়েছেন – ‘আরে ওরা তো প্রতিমা টেনে নিয়ে যায় রে, এই মাটি দিয়ে আবার পরে কালী ঠাকুরের মূর্তিতে কাজে আসে’ , তবু অতীনের রাগ কমেনি । শহিদ কলোনির ছেলেগুলোর সাথে সে পেরে ওঠেনি কখনো । তাদের কে কখনো সে ভালো চোখে দেখেই না ।

কলোনির ছেলে শিবু অতীনের থেকে বছর খানেকের ছোটই হবে, মহা ডানপিটে, অসভ্য। ফল চুরি থেকে আরম্ভ করে পাড়ার পুজোয় নানা ছুতোয় ঝামেলা করা, ভোগ নিয়ে অশান্তি সবেই সে আগে । বড়রা এমনিই ঘেঁষতে দেন না – এটা ভদ্রলোকের পাড়া, তাদের পুজো । চট করে এখানে ছোটলোকদের দেখলে কারই বা মেজাজ ভাল থাকে। শিবুর বাবা মদন মদ্যপ রিক্সাওয়ালা। মহালয়ার দিন বাজার করে ফেরার সময় ভাড়া নিয়ে গোপালবাবুর সাথে খিটিমিটি লেগে গেলে রাগের মাথায় মদন বলেই ফেলে – ‘দেখব তোদের বিস্কুটের ঠাকুর থাকে কদ্দিন’ । কথাটা সত্যি নয় পুরোপুরি, ঠাকুর নয়, প্যান্ডেল তৈরী হয়েছে এক ধরনের বিস্কুট দিয়ে – সেই নিয়ে গোপালবাবু জোর পাবলিসিটি ও করেছেন – একটা প্রাইজ যদি এই বাজারে পেয়ে যাওয়া যায়, কম প্রাইজ তো আর দেওয়া হয় না এখন।

এবছর ১০ বয়স হওযায় অতীন পারমিশন পেয়েছে বিকেল থেকেই পুজোমন্ডপে আসার। আর সেই থেকেই যত বিপত্তি। সন্ধে হবে হবে যখন তখন থেকেই প্যান্ডেলের কাছে পিঠে শিবু কে ঘুর ঘুর করতে দেখেছে অতীন – ‘এই তুই এসেছিস কেন আমাদের পুজোয়, যা পালা’ । শিবু উত্তর দেয়নি, মুখ ভেংচে চলে গেছে। এতে অতীনের রাগ আরো বেড়েছে – ‘ঠাকুর ভাসান হলে তো তোরা যা অসভ্যতা করবি জানিই , এখন কেন?’ শিবু গা করেনি, অতীন ও সরে এসেছে যেখানে পুরোহিত মশাই বসেছেন সেদিকে। কাঁসর ঘন্টা টিং টিটিং টিং করে বাজতে সুরু করে দিয়েছে ঢাকের সঙ্গে , গোপাল কাকু বলেছেন ঠাকুর গাড়িতে উঠতে এখনো কিছুটা দেরী আছে। মা, কাকিমারা সিঁদুর খেলে এখন বাড়ি গেছে, এই সময় অতীনের মাকে খুব ভাল লাগে ঠিক দুগ্গাঠাকুরের মত। ঘুরতে ঘুরতে অতীন প্যান্ডেলের পিছনের দিকে আসতেই দেখে শিবু প্যান্ডেলে মুখ চেপে ধরে কি একটা করছে। এমনিই আলো কম, এই দিকটায় একদমই নেই – ‘এই, তুই কি করছিস?’ ‘আরে যা ফোট’ শিবু হাত ঝাড়া দেয়। ‘না, তুই কি করছিস বল এখানে, প্যান্ডেলে কি লাগাচ্ছিস?’ শিবু একটু অধৈর্য হয় -‘ধুর বাবা, লাগাবো কেন, চেটে দেকছি , সুনিচি ক্রিম বিস্কুট’। ‘ একি, প্যান্ডেলের ক্ষতি হবে , দাঁড়া আমি ডাকছি বড়দের’ অতীন বলে ওঠে, ‘যা: , নালিশ কর গে যা ‘ শিবু পাত্তাই দেয় না। ‘কাকু, কলোনি পাড়ার একটা ছেলে প্যান্ডেলটা ভাঙ্গার চেষ্টা করছে’, অতীন সমীরবাবুকে বলে যিনি ওর বাবার বন্ধু। সমীর বাবু সেক্রেটারির কানে তোলেন ‘গোপালদা, কলোনির ২-৩ ছেলে প্যান্ডেলের পেছন দিকটা এট্যাক করেছে’ । গোপালবাবু সবে বসে একটা সিগারেটে টান দিয়েছেন , শুনেই হাঁসফাঁস করে উঠে পড়েন – ‘বলেন কি, কাল সকালে ২ কোম্পানি থেকে আসবে প্যান্ডেল পরিক্রমায় , কালই তো লাস্ট ডে , এখন এসব কি, চলেন দেখি ‘ । শিবু তখন চাখা শেষ করে সত্যি সত্যিই একটা ছোট টুকরো ভাঙ্গতে পেরেছে , চেটে মনে হয়েছে চকলেট , শিবু র চকলেট খেতে খুউব ভালো লাগে। ‘কি রে এখানে কি করছিস? আর বাকি গুলো কোথায় তোদের ?’ গোপালবাবু হুঙ্কার ছাড়েন। শিবু প্রথমটায় একটু ঘাবড়ে যায়, তার পরেই তেড়ে ওঠে –

– ‘কেন কি করছি দেখতে পাচ্ছ না?’

– ‘খুব তর্ক করছিস দেখছি’

– ‘শালা কাল থেকে তো আর থাকবে না মাড়া’

‘তবে রে’ গোপালবাবু এক জাপ্তে শিবুকে ধরে একটা চড় দেন – ‘আমায় মারা, দেখাচ্ছি’ শিবু কোনরকমে হাত ছাড়িয়ে একটু ছুটেই সামনে পড়ে থাকা বাঁশের টুকরো তুলে এনে সজোরে বসিয়ে দেয় প্যান্ডেলের পেছনে। মড়াত করে একটা আওয়াজ হয় , শিবু ও একটু ঘাবড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় । ঠিক এতটা সেও আশা করেনি । সমীরবাবু এই সুযোগে শিবুর হাতের বাঁশটি কেড়ে নেন। ‘দেখাচ্ছি মজা’ চালিয়ে দেন শিবুর মাথা বরাবর। নিশানায় ভুল হয় না , শিবু পড়ে যায় রাস্তায়। গোপালবাবু এবার লাথি মারতে থাকেন এলোপাথারি , সমীরবাবু আরো ঘা কতক বসিয়ে দেন – ‘শালা ছোটলোকের বাচ্ছা’ । ‘আরে এটা তো সেই মদনের ব্যাটা’ সমীর বাবু বলেন। ‘তাই নাকি, দেখি তো ডান্ডাটা’ হাতের সুখ করে নিতে চান গোপালবাবু ও। এদিকে দেরী হয়ে যাচ্ছে, ভাসানের শেষে বিলে লাইন লেগে যাবে অন্য ক্লাবগুলোর , সেক্রেটারি কে খুঁজতে খুঁজতে চলে আসেন রমেন বাবু – ‘কি মশাই আপনি এখানে? কখন থেকে খুঁজছি। মাইরি পারেন ও বটে , দেরী হবে হেব্বি তখন সব লেট’ । রমেনবাবু একটু খচ্চর টাইপ অর্থাত সব কিছুতেই কিচাইন তায় আবার কম্যুনিস্ট এবং গোপালবাবুর ভাড়াটে তাই গোপালবাবু বিশেষ পছন্দ করেন না। ‘চলুন’ বলে এগোতেই অতীন চেঁচিয়ে ওঠে – ‘কাকু, শিবু পড়ে আছে তো ‘ । রমেনবাবু এতক্ষণ দেখতে পাননি মাটিতে নিথর পড়ে থাকা শিবুকে , এবার সোরগোল সুরু করেন – ‘একি , একে এভাবে কে মারল ? ওরে বাবা, কি অনাসৃষ্টি পুজোর দিনে’ । বড্ড জ্বালাতন মনে করেন গোপালবাবু – ‘এই অতীন তুই যা ওদিকে এখানে থাকতে হবে না আর। আমরা শিবু কে বাড়ি পৌঁছে দেব চিন্তা করিস না’ গোপালবাবু অতীনকে পাঠিয়ে দেন সামনে ।

রমেন বাবু এতক্ষণ ঝুঁকে পড়ে দেখছিলেন শিবুকে – ‘এর তো মাথায় চোট গোপালদা, বেঁচে আছে তো? মরে গেলে কি হবে?’ ‘সে কি কথা?’ নার্ভাস শোনায় গোপালবাবুর গলা -‘আপনি এভাবে মারলেন কেন সমীর বাবু? কিছু একটা হয়ে গিয়ে থাকলে তখন?’ ‘আমি? ডান্ডা দিয়ে মারবেন বলে ঘা গুলো তো আপনিই মারলেন গোপালদা’ সমীর ফুঁসে ওঠেন। রমেন বাবু বোঝেন বেগতিক ব্যাপার – ‘আমার মনে হয় এটা জানাজানি হলে কেচ্ছা হবে গোপালদা , থানা পুলিশ কেলেঙ্কারী , দুজনেই জেলে যাবেন’ । রমেনবাবু শিবু কে কয়েকবার নাড়ার চেষ্টা করেন, কোন লাভ হয় না । গোপালবাবু পাশে বসে পড়েন মাটিতেই – ‘তাহলে কি করব এখন ?’ গোপালবাবুর গলা ভেঙ্গে আসে । রমেন বাবু গলা খাঁকড়ান – ‘আপনি আর সমীরবাবু চলে যান, ভাসানের ব্যবস্থা করেন , ক্লাবের মন্টু আর টুকু কে পাঠিয়ে দিন। কাউকে কিছু বলার দরকার নেই’ । গোপালবাবু দোনোমনো করতে থাকেন – ‘ কি হবে রমেন ? আসলে এমন মাথায় রক্ত চড়ে গেল তখন । যদি সত্যিই না বেঁচে থাকে? ওরে বাবা আমি আর ভাবতে পারছি না’ । ‘অত ভাববেন না গোপালদা , খারাপ কিছু হয়েছেই বা ভাবছেন কেন । আমি মন্টুদের বলছি ওকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে , বলবে রাস্তায় পড়ে ছিল তাই দিয়ে গেল’ রমেন বাবু কর্পোরেশনে কাজ করেন, হিসেব নিকেশ চট করে মাথায় খেলে – ‘নিন এবার উঠুন আর ওদিকে যান । নাহলে আমার মত আরো সবাই এদিকে খুঁজতে এলে আর সামলানো যাবে না একদমই’ । অগত্যা গোপালবাবু উঠে পড়েন, রমেন বাবুর কাঁধে হাত রাখেন ‘থ্যাঙ্কু ভাই’ । ‘একটা কথা ছিল দাদা, আমার ওই অগ্রিমেন্ট টা’ রমেন বাবু হওয়ায় ভাসিয়ে দেন কথা । ‘আরে ভেব না ওসব সামলে দেব পুজোটা উতরে যাক ‘ ।

অতীন ফিরে এসেও উসখুস করতে থাকে। এত জোরে না মারলেও তো হত। শিবুর বেশি লাগেনি নিশ্চয়। মাথা ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে দেখেছে অতীন । সিওর । সে ফিরে আসার একটু পরেই সে দেখেছে গোপালকাকু আর সমীরকাকু ফিরে আসছেন। ‘শিবু বাড়ি চলে গেছে ?’ অতীন জিজ্ঞেস করেছে । ‘হাঁ। চল এবারে ভাসান সুরু হবে তো ‘ গোপালবাবু তাড়া দেন।

মন্টু আর টুকু কে রমেনবাবু ডেকে বলেন শিবুকে তুলে ওর বাড়িতে পৌঁছে দিতে – ‘দেরী করবি না, এবার মূর্তি বড়, হেব্বি সাইজ , জলে ভাসানের সময় হেবি ফাটবে’ । মন্টু পাড়ার মস্তান, সেও শহীদ কলোনির ছেলে ।মদনের সঙ্গে হালকা খিটিমিটি আছে । শিবু কে ঝুঁকে পড়ে দেখে মন্টু , নাহ শ্বাস পড়ছে না বোধহয় , রিস্ক কেস । ‘মালটা কে ওর বাড়ি অব্দি নিয়ে যাওয়া যাবে না বুয়েছিস , শালা টেঁসে গেছে মনে হচ্ছে। শেষে আমরা ফালতু ন্যাকড়াবাজিতে জড়িয়ে যাব শালা’ – মন্টু টুকু কে বলে । ‘তাহলে কি করবে মনাদা? এখানেই ফেলে রেখে দেবে? ‘ টুকু জিজ্ঞেস করে, ওদিকে মনে হচ্ছে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি শেষ । ‘তোর শালা গাঁটে বুদ্ধি, এখানে ফেলে রাখলে তো আগে ধরবে। চল একটা বস্তায় ঢোকা, মালটা কে ঠাকুরের সাথেই’ চোখ মারে মন্টু ।

অতীন দেখেছে মন্টুদা আর টুকুদা প্যান্ডেলের পেছনে থেকে একটা বড় বস্তা নিয়ে ভাসানের একটা গাড়ির নিচে রেখেছে। ‘এটা কি গো ?’ অতীনের প্রশ্নে টুকুদা বিরক্ত হয় -‘তোর সব কিছুতেই এত প্রশ্ন কেন রে। সব ভাসান হবে বুঝলি? ভাসানের গাড়িতে যা ওঠে সে গুলো সব ভাসানে যায় । এবার চুপ করে সামনে যা । এবার দেখবি কেমন আলোর বাজি হবে আমাদের ক্লাবের সব তাক লেগে যাবে ‘ ।

বিলের ধারে এখনো অনেক পার্টি এসে পড়েনি , তাই ভাসানের জায়গা বাছা চলছে – এদিকের সিঁড়ি দিয়ে নাকি আরেকটু ঘুরে গিয়ে। ঘুরে জায়গাটা সেখানে পাশে মাঠটা বেশ সমান সেখানেই বাজি সাজানো ভাল। গোপালবাবু রমেনবাবুকে একটু আড়ালে ডাকেন – ‘বাজি ওখানে সুরু করে দিলে এই ঘাটে বস্তাটা ভাসিয়ে দেবেন। ‘

এবার নানা হাউই বাজি গোপালবাবু আনিয়েছেন। আকাশের রং আলো করে দিচ্ছে তারা। কত ওপরে উঠছে । আলোর মালা হয়ে যাচ্ছে কোন কোন গুলো। শব্দবাজি এবার কম হবে গোপালবাবু বলেছেন – শব্দ-দুষনের ক্ষতি সম্বন্ধে পোস্টার একজিবিশন ও হয়েছে পাড়ায় । ঢাকিরা কাঁসর ঘন্টার সঙ্গে মাতালের মত নেচে চলেছে। পাড়ার টুবাই দাদা , কাঞ্চনদাদা, মল্লিকাদি ,শুভ্রদি সবাই নাচতে সুরু করে দিয়েছে ।এবার ধুনুচি নাচে ফার্স্ট হয়েছে যে নতুন কাকিমা সেও দাদা-দিদিদের গ্রুপে ঢুকে পড়েছে ।

অতীন দেখেছে মন্টুদা আর টুকুদা বস্তাটা ওদিকের সিঁড়ি দিয়ে জলের কাছে নিয়ে গেছে। হই হই করে ভাসান হয়ে গেল ঠাকুর ।ঢাকিরা আরো জোরে বাজাচ্ছে ঢাক , একসাথে ৫ করে আলোর বাজি ছাড়া হচ্ছে এখন। গোপালবাবুর বড় ছেলে একটা এযার রাইফল দিয়ে ফাঁকা আওয়াজ করছে আকাশে। কলোনি পাড়ার ছেলে গুলো অন্ধকার সরীসৃপের মত নেমে পড়েছে জলে । অতীন ও ওদিকের সিঁড়ি দিয়ে – কলোনি পাড়ার ছেলে গুলো পেয়ে যাওয়ার আগেই সে পৌঁছে যাবে বস্তাটার কাছে ।

‘বল, বল দুর্গা মাঈকি জয়’ । ‘আসছে বছর আবার হবে, বছর বছর আবার হবে’ । ঘুরে ফিরে, ঘুরে ফিরে আরো অনেকটা রাত অব্দি বিলের জলে, আকাশে, বিলের পাশের মাঠের গাছ গুলোয় এই আওয়াজ পাক খেয়ে খেয়ে উদ্দেশ্যহীন বয়ে বেড়াতে লাগল।